আদালতের রায় না মেনে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার ডাকা হলেও অবশেষে সেই অবস্থান থেকে পিছু হটেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ মে অনুষ্ঠেয় মৌখিক পরীক্ষা 'অনিবার্য কারণ' দেখিয়ে স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে সংস্থাটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে (স্মারক নং- ২৭.৮৭.০০০০.০০০.৪০৪.১২.০০০২.২৩.৬৪০) এ তথ্য জানানো হয়।
বুধবার (২১ মে) বাংলা স্কুপে
আদালতের রায় মানছে না ডিপিডিসি শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিল। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলে আদালতের রায় উপেক্ষা করে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদানের সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২০ মে) আপিল বিভাগ জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদানের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু রায়ের পর বিকেলেই ডিজিএম মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, সুইচ বোর্ড অ্যাটেনডেন্ট, বিল সুপারভাইজার, কমপ্লেইন সুপারভাইজার, ড্রাফটসম্যান, ফোরম্যান, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্টেন্ট পদে কর্মরতদের পদোন্নতি দিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। আগামী ২৫ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত বিদ্যুৎভবনে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক প্রকৌশলী বলছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি নিয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই মামলার রায়ে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ডিপিডিসির এইচ আর বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা মামলার রায় বাস্তবায়ন না করে আপিল করেন এবং মামলাটি বিভিন্নভাবে দীর্ঘায়িত করেন। এতে অনেক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেয়ে কষ্ট নিয়ে অবসরে চলে যান। আবার অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। প্রকৌশলীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, যথাসময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি না পেলে তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতি হয় না। এক ধরনের বঞ্চনা নিয়েই তাদের অবসরে যেতে হয়।
তাঁরা আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনও রয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। এদের মধ্যে অন্যতম ডিপিডিসির জিএম (এইচআর) মো. হাসনাত চৌধুরী, ডিজিএম (এইচআর) মো. মনিরুজ্জামান এবং ডিজিএম (লিগাল অ্যান্ড এফেয়ার্স) নিহাররঞ্জন সরকার। তাঁরা বিভিন্ন সময় চাকরি বিধিমালার মারপ্যাচে ফেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে আসছিলেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হন নির্বাহী পরিচালক (অ্যাডমিন ও এইচআর) সোনামণি চাকমা। তাঁরা যে কোন মূল্যে বিতর্কিত পদ্ধতিটি বহাল রাখতে চেয়েছিলেন, যাতে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করা যায়। এই চক্রটি এখনও রায় বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ প্রকৌশলীদের।
এদিকে, ডিপিডিসির প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁরা এর জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ সচিব, ডিপিডিসির বোর্ড চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সকল স্তরে পদোন্নতি দিয়ে শূন্যপদ পূরণের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চিতে বিশেষজ্ঞ কমিটি